কোভিড-১৯ঃ জনসচেতনতায় ভুল ধরণা

কোভিড-১৯: জনসচেতনতায় কিছু ভুল ধারণা করণীয়

bvwmgv LvZzb,

mnKvix cwiPvjK

HSTTI, ivRkvnx

 

ভূমিকাঃ ছোট্ট একটি অনুজীব সারা পৃথিবীকে স্থবির করে দিয়েছে। নাম তার নভেল করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯। শুধু স্থবিরই নয়, প্রতিটি দেশকে কিছুদিনের জন্য একঘরে করে দিয়েছিল এমনকি আক্রান্ত দেশগুলি নিজেদের আঞ্চলিক সীমানার আঙিনাতেও একটি সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য দেশের প্রতিটি নাগরিকের চলাফেরা সীমাবদ্ধ করে দিয়েছিল প্রায় সবগুলো দেশের সরকারই করোনার বিস্তাররোধে আন্তর্জাতিক সীমানার মধ্যে অন্য দেশের যাতাযাত বন্ধ করে দিয়েছিলেন এমনকি দেশের মধ্যেও জনগণের ঘরের বাইরে যাওয়াকে সীমিত করে দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি ও লকডাউন দিয়েছিলেন এখনো পৃবিথীর অনেক দেশেই লকডাউন চলছে বাংলাদেশ সরকারও পুরো দেশ আড়াই মাসের জন্য সাধারণ ছুটি ও লকডাউন দিয়ে করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর হাত থেকে দেশের জনগণনকে রক্ষা করার চেষ্টা করে গেছেন আবার কখনো কখনো বেশি আক্রান্ত এলাকাকে রেড জোন ঘোষণা দিয়ে এলাকাভিত্তিক লকডাউন দিয়ে এই রোগের বিস্তার রোধের চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন জীবনযাত্রা, চলাফেরা, কর্ম, পেশা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, সামাজিক কর্মকাণ্ড, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, এমনকি মৃত ব্যক্তির সৎকার কার্যও সীমাবদ্ধ ও সংকুচিত হয়ে পড়েছিল এই স্থবির পরিস্থিতিতে দেশের কৃষক, শ্রমিক, কুলি, দিনমজুর, ব্যবসায়ী, দরিদ্র, অসহায়, খেঁটে খাওয়া মানুষ, দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ, অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মজীবি মানুষ, কেজি স্কুলের শিক্ষক কর্মচারীসহ অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানের শিল্পপতি, উদ্যোক্তাগণও আর্থিক ক্ষতির সম্মূখীন হয়েছিলেন অনেকে চাকরি হারিয়েছিলেন, ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল দিন আনা দিন খাওয়া মানুষদের প্রতিদিনের উপার্জন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সরকার লকডাউনকালীন সময়ে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ, কৃষক, শ্রমিক, এবং আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়াসহ কৃষক, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা, ক্ষুদ্র ঋণ ও অনুদান দিয়েছিলেন এছাড়া দরিদ্র ও অসহায় মানুষদেরকে, কর্মহীন ও উপার্জনহীনদেরকে খাদ্যদ্রব্য ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছিলেন যদিও সরকারী এসব প্রণোদনা, অনুদান ও খাদ্যদ্রব্য বিতরণে নানান রকম অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র দেখা গেছে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থা, গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল, এমনকি ব্যক্তিগত পর্যায় থেকেও মানুষ দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের মুখে আহার তুলে দেওয়াসহ আর্থিক সাহায্য - সহযোগিতা করেছে, মানুষের বিপদে ও প্রয়োজনে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে এছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে ও নির্দেশনায় দেশে কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা সচল থাকায় করোনাকালীন দুর্যগের মধ্যেও দেশে খাদ্য ঘাটতি হয়নি। তাঁর নির্দেশিত “দেশে এক ইঞ্চি জমিও যেন পতিত না থাকে” নীতিতে কৃষকগণ অনুপ্রাণিত হয়ে লকডাউনকালীন সময়েও জমি চাষ করে আল্লাহ্‌র অশেষ মেহেরবানীতে দেশে করোনা পরিস্থিতিতেও খাদ্য উৎপাদনে সাফলতার পরিচয় দিয়েছেন। বাংলাদেশের মাটি যে আসলেই সোনার চেয়েও খাঁটি, এই করোনাতেও তাঁর প্রমাণ আরেকবার পাওয়া গেল।

সরকার লকডাউনকালীন সময়ে জনগণকে ঘরে থাকার নির্দেশনা দিয়েছিলেন আর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সরকারের এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য জনগণকে ঘরে আটকে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন, নিত্য প্রয়োজনীয় ও জরুরী পণ্যের দোকান ছাড়া বাকী সমস্ত দোকানপাট বন্ধ রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন কিন্তু মানুষের নিত্যদিনের কেনাকাটা, দৈনন্দিন বাজারঘাট, ঔষধপত্র কেনা, হাসপাতালে রোগী নিয়ে ছুটে বেড়ানো ইত্যাদি জরুরী কাজগুলো তো করতেই হোত জনগন যাতে প্রয়োজন ছাড়া এবং মাস্ক ছাড়া ঘরের বাইরে  না যায় তার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রতি মুহূর্তে মাঠে নেমে কাজ করে গেছেন ১৯ মার্চ ২০২০ দেশে প্রথম লকডাউন দেওয়া হয় এর পর ২৬ শে মার্চ থেকে লকডাউন বা সাধারণ ছুটির প্রায় আড়াই মাস পর ৩১ মে সরকার লকডাউন  তুলে নিয়েছিলেন কারণ দেশের দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষ, ব্যবসায়ী, কর্মজীবিসহ সকল স্তরের মানুষ চরমভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছিল তাছাড়া সরকারের পক্ষেও মাসের পর মাস দেশের কোটি কোটি দরিদ্র, অসহায় ও খেটে খাওয়া মানুষের খাওয়ানোর দায়িত্ব নেওয়া সম্ভবপর নয় তার উপর সব কিছু বন্ধ থাকার কারণে দেশের অর্থনীতির চাকা একেবারে স্থবির হয়ে পড়েছিল তাই সরকার দেশের অর্থনীতির চাকা পুনরায় সচল করার জন্য এবং দেশের মানুষের দৈনন্দিন জীবিকা নির্বাহের জন্য এক সময় লকডাউন তুলে দিলেন  তবে অসংখ্য শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকদেরকে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত ও মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি অব্যাহত রাখলেন কিন্তু অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন ফলে দেশের জনগণের মধ্যে একটানা বন্দি জীবনের অবসান ঘটে, আর্থিক কার্যক্রম সচল হয় এবং মানুষের জীবন-জীবিকায় আসে নিশ্চয়তা কিন্তু সরকার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মোতাবেক দেশের জনগণকে দৈনন্দিন জীবন যাপনে, কর্মে ও পেশায় দায়িত্ব পালনের সময় ও ঘরের বাইরে চলাফেরার সময় কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দেন নির্দেশনাগুলো ছিলঃ

1.      ঘরের বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে

2.     কমপক্ষে ৩ ফুট বা ১ মিটার শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে যাকে সামাজিক দূরত্ব হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে

3.     গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়া

4.      কিছুক্ষণ পর পরই ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া বিশেষ করে বাইরে থেকে ঘরে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং হাত না ধুয়ে চোখে মুখে হাত স্পর্শ না করা

5.     যে কোন অফিসে, প্রতিষ্ঠানে বা শপিংমলে প্রবেশের সময় হান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবানুমুক্ত করা এবং প্রতিটা প্রতিষ্ঠানের গেটেই এই জীবানু নাশকের ব্যবস্থা করা

6.    "নো মাস্ক নো সার্ভিস" - এই নির্দেশনা অনুযায়ী সকল সরকারী-বেসরকারী অফিস, গণপরিবহণ, দোকান, শপিংমল, ফ্যাক্টরি, কলকারখানা ইত্যাদি সকল স্থানে সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করা

7.    বিভিন্ন পারিবারিক, সামাজিক, ধর্মীয়, সাংগঠনিক বা অন্যান্য অনুষ্ঠান ও কার্যক্রমে গণজমায়েত না করা

8.    বাস বা গণপরিবহণে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে ২ সীটে একজন যাত্রীর আসন ব্যবস্থা করা। কারণ বাস্তবে এর উল্টো চিত্র দেখা যেত। দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়া হোত, কিন্তু প্রতিটি সীটেই যাত্রী বসানো হোত। কিছু মাস পরে দ্বিগুণ ভাড়ায় দুই সীটে যাওয়ার  শর্ত তুলে দেওয়া হয়।   

9.    ভীড় এড়িয়ে চলা

10. হাঁচি, কাশি দেওয়ার সময় টিস্যু, রুমাল বা হাতের কনুইয়ের ভাঁজে মুখ ঢেকে হাঁচি, কাশি দেওয়া

 

কিন্তু বাস্তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর উল্টো চিত্র দেখা গেল বিশেষ করে অশিক্ষিত, অল্প শিক্ষিত, অর্ধ শিক্ষিত কোন কোন ক্ষেত্রে শিক্ষিত মানুষদের মধ্যেও বিপরীত প্রবণতা দেখা গেছে এবং যাচ্ছে দিন মজুর, শ্রমিক, রিক্সা চালক, ভ্যান চালক, অটোচালক, দোকানদার, বাসচালক, সাধারণ যাত্রী, ক্রেতা-বিক্রেতা, পথচারী- কম বেশি প্রায় সব শ্রেণি-পেশার অনেক মানুষের মধ্যেই কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে সরকারের নির্দেশনাগুলো না মানার প্রবণতা প্রবলভাবে দেখা যাচ্ছে সকল মানুষদের মধ্যে যে প্রবণতাগুলো দেখা যায় তা হলোঃ

1.      মাস্ক না পরেই বাজার-হাটে, দোকানে, অফিসে বা কর্মস্থলে যাওয়া এবং মাস্ক না পরেই বাসে, রিক্সায়, অটো, সিএনজি প্রভৃতি গণপরিবহণে উঠা

2.     সরকার জনগণকে প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যেতে নিষেধ করলেও এই করোনাকালীন সময়েও হাজার হাজার মানুষ কোন প্রকার সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব বজায় না রেখেই এক সাথে গাদাগাদি হয়ে চলাফেরা, কাজ-কর্ম করা, আড্ডা দেওয়া, পিকনিক করা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান-বিশেষ করে ওয়াজ মাহফিল, মাজার জিয়ারত, দরগাহ্শরীফ জিয়ারত ইত্যাদি করা, সামাজিক অনুষ্ঠান, পারিবারিক অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, বিভিন্ন সংগঠনের আলোচনা সভা, প্রতিবাদ সভা, মানববন্ধন, মিছিল, মিটিং ইত্যাদি কার্যক্রম করছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোন প্রকার শারীরিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না।

3.     মাস্ক ব্যবহার করলেও অনেকের সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহার না করা। যেমন- মাস্ক থুতনির নিচে বা কানে ঝুলিয়ে রাখা, নাক বের করে রাখা, কথা বলার সময় মাস্ক খুলে কথা বলা।

4.     অনেকেরই নিরাপদ মাস্ক ব্যবহার না করা দিনের পর দিন একই সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করা অথচ একটা সার্জিক্যাল মাস্ক একদিনের বেশি ব্যবহার করা ঠিক নয়  

5.     রাস্তাঘাটে যত্রতত্র কফ থুথু ফেলা

6.    হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় কোন প্রকার রুমাল, টিস্যু বা কনুই দিয়ে মুখ না ঢেকে লোকজনের মুখের সামনেই খোলা মুখে হাঁচি-কাশি দেওয়া

7.    সাবান দিয়ে হাত ধোয়া বা হ্যাণ্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার না করার প্রবণতা

8.    রাস্তাঘাটে যেখানে সেখানে ব্যবহৃত মাস্ক ফেলে রাখা

9.    করোনার টিকা গ্রহণের প্রতি অনীহা

10.                        করোনার টিকা সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করা।

সরকার বারবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া সত্ত্বেও বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে নির্দেশনাগুলো মানার প্রতি ব্যাপক অনীহা দেখা গেছে এবং বর্তমানে সেই প্রবণতা আরো বেড়ে গেছে ব্যক্তিগতভাবে কেউ কোন ব্যক্তিকে সরকারের নির্দেশনাগুলো মানার কথা বললে বিশেষ করে মাস্ক পরার কথা বললে তারা নানান রকম বিপরীত যুক্তি দেখানো শুরু করে মাস্ক পরার কথা বললে কেউ কেউ আবার প্রচণ্ড রকম আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে এবং উত্তেজিত হয়ে প্রতিবাদ করে যেন মাস্ক পরতে বলাটা অন্যায় হয়ে গেছে গণপরিবহণে মাস্ক ছাড়া কোন যাত্রী উঠলে তাকে মাস্ক পরতে বললে কেউ কেউ প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে বলে "মরণ থাকলে মরব, আর আপনার অসুবিধা হলে আপনি মাইক্রোবাস ভাড়া করে যান" যাহোক, মাস্ক পরাসহ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা বললে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে  মানুষ যে সকল যুক্তি দেখায় তা নিম্নে দেওয়া হলোঃ (তাদের যুক্তিগুলো বন্ধনী চিহ্নের মধ্যে দেওয়া হলো)

1.      "কপালে মৃত্যু থাকলে কেউ ঠেকাতে পারবে না জন্ম-মৃত্যু আল্লাহ' হাতে মাস্ক পরলে বা স্বাস্থ্যবিধি মানলে আল্লাহ' উপর হাত ঘোরানো হবে" বিশেষ করে তথাকথিত গোঁড়া ধার্মিক, অশিক্ষিত, অল্পশিক্ষিত লোকেরা এসকল কথা বেশি বলে থাকে অথচ সকল লোকেরাও কোভিড-১৯ ছাড়া অন্যান্য অসুখ হলে বাঁচার জন্য ঠিকই ডাক্তারের কাছে দৌঁড়ে যায় বা সেই অসুখ থেকে বাঁচার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করে তখন তাদের মনে হয় না, ডাক্তারের কাছে যাওয়া আল্লাহ' উপর হাত ঘোরানো এমনকি অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে হাতুরে চিকিৎসা দেওয়া কবিরাজের কাছেও তারা যায় শুধুমাত্র কোভিডের বেলায় তারা আল্লাহ' উপর হাত ঘোরানোর ভয়ে হিম হয়ে থাকে তারা এটা বোঝে না যে, আল্লাহ্ দেওয়া বুদ্ধি এবং নিয়ামত ব্যবহার করেই বান্দাগণ মানব কল্যাণের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি কৌশলের উদ্ভাবন করেন চিকিৎসাবিদ্যা বা সুস্থ্য থাকার কৌশলও তার মধ্যে একটি আর যারা করোনা প্রতিরোধে সকল কৌশলের বিরুদ্ধে কথা বলেন, তারা কি অন্য দরকারে মানুষের তৈরি জিনিস বা মানুষের উদ্ভাবিত পদ্ধতি ব্যবহার করে না? বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত অন্যান্য উপাদান-উপকরণ কি ব্যবহার করছে না? আধুনিক জীবন যাপনের অন্যান্য যন্ত্রপাতি বা উপকরণাদি কি তারা উপভোগ করছে না? যত তাদের যত গোঁড়ামী শুধু করোনা নিয়ে তাছাড়া আল্লাহ্কি কোন বিপদে বা সমস্যায় প্রতিরোধ বা প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন? আমাদের মহানবী (সাঃ)- কি কোন রোগ-বালাই নিরাময়ে নিজে কোন পথ্য গ্রহণ করেননি বা তাঁর উম্মতকে কোন পথ্য নেওয়ার বিষয়ে উৎসাহ দেননি? আমরা জানি, মহানবী (সাঃ) বলেছেন, কালোজিরায় মৃত্যু ছাড়া অন্য সকল রোগের আরোগ্য রয়েছে অর্থাৎ তিনি যে কোন অসুখে কালোজিরা ব্যবহারের বিষয়ে উৎসাহ দিয়েছেন যুগের উৎকর্ষতা এবং প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সাথে সাথে মানুষ তার বুদ্ধিমত্তা আল্লাহ্ দেওয়া নিয়ামত ব্যবহার করে জীবনযাপনের অন্যান্য অনুষঙ্গের মতো চিকিৎসা পদ্ধতিরও উন্নয়ন ঘটিয়েছে এবং আরো উন্নততর করার চেষ্টা করেই যাচ্ছেন।। আমরা জানি, আল্লাহ্পৃথিবীতে যত রোগ দিয়েছেন, ততগুলি নিরাময়ের উপায়ও দিয়েছেন কিন্তু মানুষকে সেই উপায়গুলি আবিষ্কার করে বা খুঁজে নিতে হবে এগুলো ব্যবহার করাকে আল্লাহ্ উপর হাত ঘোরানো বলে না বরং এটা বলা যেতে পারে, যারা এটা ভাবছেন, তারা তাদের ভাবনার মধ্য দিয়েই শিরক করছেন

2.     "করোনায় শুধুমাত্র বড়লোকেরা মরে, কোন গরীব করোনায় মরে না" বেশিরভাগ খেটে খাওয়া মানুষ, দোকানদার, রিক্সাওয়ালা, এমনকি অনেক শিক্ষিত মানুষের মুখেও কথা শোনা যায় কিন্তু তথ্য তারা পেল কোথায়? বিষয়ে কি কোনো পরিসখ্যান বা কোনো তথ্য উপাত্ত বা কোনো তালিকা কোনো মিডিয়ায় বা কোনো গবেষণায় প্রকাশ পেয়েছে? যার প্রেক্ষিতে এক শ্রেণির মানুষ বলে যে, করোনায় শুধু বড়লোকেরা মরে? তবে হ্যাঁ একটা ঘটনা সব সময়ই ঘটে সেটা হলো- পর্যন্ত দেশে যত নাম করা বড়লোক, নামী-দামী উচ্চ পদস্থ মানুষ করোনায় মারা গেছেন, দেশের সকল প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া, ফেসবুক অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই সব বড়লোক, নামী-দামী, উচ্চ পদস্থ মানুষদের করোনায় আক্রান্ত মৃত্যুর খবর ছবিসহ প্রচার করা হয় কিন্তু কোন গরীব বা সাধারণ মানুষ করোনায় আক্রান্ত বা মৃত্যু হলে তাদের নাম বা ছবি বা কোন তথ্য কখনো কোন মিডিয়ায় প্রচার করা হয় না মিডিয়ায় প্রতিদিন শুধু মোট আক্রান্ত এবং মোট মৃত্যুর তথ্য আসে সেই মোট আক্রান্ত আর মোট মৃত্যুর মধ্যে কয়জন ধনী আর কয়জন গরীব বা সাধারণ রোগী সেই তথ্য দেওয়া হয় না সেটা দেওয়াও কঠিন কাজ আর তাতেই সাধারণ মানুষ ধরে নেয় যে, করোনায় শুধু বড়লোকেরা আক্রান্ত হয় আর বড়লোকেরাই মরে আর এই ধারণার বশবর্তী হয়ে তারা যেটা করছে তা হলো- তারা মাস্ক পরছে না, শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলছে না তবে হয়ত মাস্ক ব্যবহার না করলেও সবাই করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে না বা আক্রান্ত হলেও সবার মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে না কিন্তু তারা যে করোনার জীবাণু-বাহক হয়ে অন্যদের মাঝে করোনার বিস্তার ঘটাচ্ছে না, তাতো নয় কিন্তু কথাটা তারা বোঝার চেষ্টা করছে না ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে বোঝাতে গেলেও নানান রকম বিপরীত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে এটা দেশের কোভিড-১৯ বিস্তারে যে কতটা মারাত্মকভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে তা বলাই বাহুল্য

3.     তাদের আরেকটি যুক্তি হলো-"মাস্ক করোনা প্রতিরোধ করতে পারে না" যারা মাস্ক ব্যবহারের প্রতি অনীহা দেখায় তাদের মতে, "করোনার জীবাণু মাস্ক ভেদ করেই সামনের মাস্ক পরা মানুষের নাকে-মুখে প্রবেশ করে সুতরাং মাস্ক পরা বা না পরা সমান কথা" যদি সবার মুখেই মাস্ক থাকে তাহলে কথা বললে বা হাঁচি-কাশি দিলে মুখ থেকে যে জলীয় কণা বা ড্রপলেট বের হয় তা মাস্ক ভেদ করে বাইরে বেড়িয়ে আসতে বাঁধা পায় এবং সামনের মানুষদের মুখের মাস্ক ভেদ করে তাদের নাকে-মুখে যেতে বাঁধাপ্রাপ্ত হয় এতে করে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির জীবাণু দ্বারা অন্যদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যায় অর্থাৎ মাস্ক ছাড়া খালি মুখে কথা বললে বা হাঁচি-কাশি দিলে একজনের মুখ থেকে জীবাণু অন্যদের নাকে-মুখে প্রবেশের সম্ভাবনা যত বেশি থাকে, সকলের মুখে মাস্ক পরা থাকলে কথা বলার সময় বা হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় তা অন্যদের নাকে-মুখে প্রবেশে অনেকখানি বাঁধাপ্রাপ্ত হয় কিন্তু কথাটা তারা নিজেরা বোঝার চেষ্টা তো করেই না, বোঝাতে গেলেও উল্টো কথা শোনায়

4.     "সরকারী-বেসরকারী অফিসের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও সদস্যগণ, বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সদস্যগণ তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে দল বেঁধে কার্যক্রম করে, অনুষ্ঠান করে, অনেকে মাস্ক পরে না, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখে না, তাতে কোন দোষ নেই, আর আমরা মাস্ক না পরলে, শারীরিক দূরত্ব বজায় না রাখলেই যত দোষ?" হ্যাঁ এইখানে জনগণকে আর কিছু বলার থাকে না কারণ মিডিয়ার খবরগুলোতে প্রায়ই দেখা যায়, অনেক ক্ষেত্রেই অনেক রাজনৈতিক দলের অনেক নৃতৃবৃন্দ বা সদস্যগণ, অনেক সংসদ সদস্যগণ কোন প্রকার সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে এবং অনেকে মুখে মাস্ক না পরেই রাজনৈতিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সম্পাদন, নির্বাচনী প্রচারণা, মিটিং, মিছিল, আলোচনা সভা, জাতীয় দিবস উৎযাপন ইত্যাদি কার্যাবলীতে অংশগ্রহণ করে এছাড়াও মিডিয়ার সংবাদগুলোতে অনেক সময় দেখা যায়, অনেক সরকারী কর্মকর্তা, কর্মচারীগণ, অনেক এমপি, মন্ত্রীগণ সরকারী কর্মকাণ্ড সম্পাদন, জাতীয় দিবস উৎযাপন, মিটিং, মিছিল, আলোচনা সভা, সমাবেশ ইত্যাদি কার্যাবলিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে এবং অনেকে মাস্ক না পরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান কার্যাবলি সম্পাদন করছেন। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা ও সংগঠনের অনেক কর্মীগণকেও মাস্কবিহীন সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখেই কর্মকাণ্ড করতে দেখা যায়। নিজ নিজ এলাকার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডেও মানুষ পদস্থ ব্যক্তিগণকে এভাবে দেখে থাকেআর সাধারণ জনগণ এসব দেখেই উক্ত কর্মকাণ্ডকে উদাহরণ দিয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখার প্রতি এবং মাস্ক ব্যবহার না করার প্রতি যুক্তি দেয় এবং সেগুলোর প্রতি উৎসাহিত হয়

5.     "বিধর্মীদেরকে পাপের শাস্তি দেওয়ার জন্য আল্লাহ্করোনা নামক জীবাণু পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন" দেশের অনেক মুসলমানদের মুখে কথা শোনা যায় কিন্তু দেশের অনেক মানুষ বাস্তবতাটা দেখেও হয় বুঝতে পারে না, না হয় বুঝতে চায় না য়ত ইউরোপ আমেরিকার দেশগুলিতে করোনায় আক্রান্ত মৃত্যুর হার আমাদের দেশের তুলনায় অনেক বেশি তার হয়ত অনেক বৈজ্ঞানিক কারণও রয়েছে কিন্তু সব দেশের মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে আর মারা যাচ্ছে তার কারণ তারা বিধর্মী তা নয় আর করোনায় যে শুধু বিধর্মীরাই আক্রান্ত হচ্ছে আর মারা যাচ্ছে, তাও তো নয় কম-বেশি পৃথিবীর সব দেশ কি করোনায় আক্রান্ত হয়নি বা সব ধর্মের মানুষই কি করোনায় মারা যায়নি? হোক তা সংখ্যায় কম বা বেশি আর পাপ কি শুধু বিধর্মীরাই করে, কোন মুসলমান কি পাপ করে না? তবে অনেকে অবশ্য কথাও বলে থাকেন যে, পৃথিবীর আপামর মানুষের পাপের শাস্তি দেওয়ার জন্য আল্লাহ্করোনা নামক ঘাতককে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন সে যাই হোক, যে কারণই থাকুক না কেন, শুধু ধর্মের কারণ দেখিয়ে এটাকে এড়িয়ে যাওয়াটা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ হচ্ছে না বরং তা করোনার আক্রান্ত আর মৃত্যুর পরিমাণকে আরো বাড়াতে সাহায্য করছে আর তাছাড়া করোনা প্রতিমূহুর্তে তার জিনগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করছে এবং যে বৈশিষ্ট্যের করোনা মানুষের শরীরে প্রবেশ করে সেই অনুযায়ীই সে ব্যক্তির শরীরকে নাজুক করে দেয় আর পৃথিবীর একেক দেশে একেক বৈশিষ্ট্যের করোনা আক্রমণ করেছে আবার একই দেশের মধ্যে আক্রান্তকারী করোনা বিভিন্ন সময় তার জিনগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করেছে করোনার এই জিনগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনের অনেক কারণ রয়েছে এই জিনগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনের জন্য অঞ্চল ভিত্তিক আবহাওয়া-জলবায়ু একটি কারণ হতে পারে বিজ্ঞানীদের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, বাংলাদেশে করোনার জিনোম সিকোয়েন্সে প্রোটিনের যে ধরণ পাওয়া গেছে তা অনেকটাই দূর্বল প্রকৃতির, মহামারি ঘটানোর মতো বিপজ্জনক নয় আর সেটাই হয়ত অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত আর মৃত্যুর হার কমের একটি কারণ হয়ত এটার জন্য এই অঞ্চলের আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা একটি কারণ যা আল্লাহ্ তরফ থেকেই আমাদের উপর একটি বিশেষ রহমত তবে আক্রান্তের সংখ্যা কম হোক বা বেশি হোক, আমাদের কখনোই এটা চাওয়া উচিৎ নয় যে, দেশে একজন মানুষও করোনায় আক্রান্ত হোক বা মৃত্যুবরণ করুক দেশের প্রত্যেকটা মানুষের এটাই আশা করা উচিৎ যে, দেশে একজন মানুষও করোনায় আক্রান্তও হবে না বা মারাও যাবে না কিন্তু অনেকেই এই বিষয়টাকে গুরুত্বই দিচ্ছে না

6.     "অন্যান্য রোগেও প্রতিদিন অনেক মানুষ মারা যায়, প্রতিদিন সড়ক দূর্ঘটনাতেও প্রচুর লোক মারা যায় সেগুলোর হার করোনার মৃত্যু থেকেও অনেক বেশি হয় সুতরাং করোনাতেও কিছু মানুষ মারা যাবে এটাই স্বাভাবিক" অনেক উচ্চ শিক্ষিত, পদস্থ ব্যক্তিবর্গের মুখে এ ধরণের উক্তি শোনা যায়। শিক্ষিত, পদস্থ ব্যক্তিবর্গ যখন এ ধরনের কথা বলেন তখন সাধারণ মানুষ  করোনার স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রতি আরো অবহেলা করবেন এটাই স্বাভাবিকএই ধরণের কথা বলে আমরা করোনার মৃত্যুকে  স্বাগত জানাচ্ছি এবং করোনায় মানুষ আক্তান্ত হবে, মারা যাবে এটাই স্বাভাবিক হিসেবে ধরে নিচ্ছি। আর তাই করোনার স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রতি অবহেলাও দেখাচ্ছি। কিন্তু অন্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার মাধ্যম আর এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার মাধ্যম তো সম্পূর্ণ ভিন্ন। স্বাস্থ্যবিধি যদি না মানি তাহলে অন্য রোগে আক্রান্ত আর মৃত্যু হারের চেয়ে এই রোগে আক্রান্ত আর মৃত্যু হার কি বেড়ে যাবে না? ধরে নিলাম, অন্যান্য অসুখেও প্রতিদিন মানুষ মারা যায়, প্রতিদিন সড়ক দূর্ঘটনাতেও অনেক মানুষ মারা যায় কিন্তু তাই বলে কি আমাদের এটা আশা করা উচিৎ যে, অন্য অসুখে মৃত্যুর মতো, সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মতো করোনাতেও কিছু মানুষ মারা যাক? যে কোন মৃত্যুই কি আমাদের কাম্য হওয়া উচিৎ? অন্যান্য রোগে যখন কেউ আক্রান্ত হয় তখন সে বা তার পরিবার কি তাকে সুস্থ্য করার জন্য আপ্রাণ চষ্টা করে না বা তাকে কি দেশ-বিদেশের ডাক্তারের কাছে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায় না? কিম্বা সড়ক দুর্ঘটনা যাতে না হয় তার জন্য কি মানুষ সচেতন থাকে না বা সরকার কি আইন-কানুন বা নীতিমালা তৈরি করে সড়ক দূর্ঘটনা বন্ধের চেষ্টা করছেন না? তাহলে করোনার জন্য সচেতনতা বা সাবধানতা নয় কেন? সাবধানতা বা সতর্কতা অবলম্বন করলে তো কোন ক্ষতি নেই যেখানে এই রোগটি শুধুমাত্র হাঁচি, কাশি বা মুখের ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়ায় যা সর্বোচ্চ পর্যায়ের ছোঁয়াচে যার হাত থেকে রক্ষার উপায় আমাদের হাতেই আছেতাহলে সেই সুযোগটা আমরা গ্রহণ করব না কেন? বিজ্ঞানীদের মতে, করোনার টিকা এখনো পর্যন্ত ১০০% মানুষের রোগ প্রতিরোধের  প্রতিরোধ বা প্রতিকারের  নিশ্চয়তা দিচ্ছে না। তেমনটা পেতে হয়ত আরো অনেকদিন অপেক্ষা করতে হবে সুতরাং চিন্তাটা তো রয়েই যাচ্ছে তাই যতক্ষণ পর্যন্ত না করোনার পুর্ণাঙ্গ প্রতিষেধক আবিষ্কার হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত করোনার হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার উপরই বেশি জোড় দিতে হবে ঠিক যেমন শুধুমাত্র সচেতনতামূলক কার্ক্রম এবং প্রতিরোধমূলক উপায় অবলম্বন করেই আজ দেশ তথা বিশ্ব থেকে HIV-AIDS নামক ঘাতক ব্যধির বিস্তার রোধ করা সম্ভব হয়েছে ঠিক তেমনি দেশ-বিদেশের প্রতিটি মানুষকে সচেতনতামূলক এবং প্রতিরোধমূলক উপায় অবলম্বন করেই করোনা নামক ঘাতককে পৃথিবী থেকে বিদায় দিতে হবে এবং এটা বিশ্বের প্রতিটি দেশের প্রতিটি নাগরিকের সম্মিলিত প্রচেষ্টটাতেই সম্ভব তা না হলে পৃথিবীর কোন একটা প্রান্তেও যদি একজন করোনা রোগীও অবশিষ্ট থাকে তাহলে তার থেকেই আবারো পৃথিবীর সকল প্রান্তে ছড়িয়ে পড়বে তাতে কোন সন্দেহ নেই। যেহেতু এটা সর্বোচ্চ পর্যায়ের ছোঁয়াচে, তাই যদি আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলি, তাহলে করোনায় মৃত্যুর হার অন্যান্য সব রোগের মৃত্যুর হারকে ছাড়িয়ে যাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই আর এই কথাটা অনেক শিক্ষিত লোকেরাও বোঝার চেষ্টা করে না

7.     "গ্রামে কোন করোনা নেই করোনা শহরের ব্যারাম তাই গ্রামের মানুষের মাস্ক পরার দরকার নেই, স্বাস্থ্যবিধি মানার দরকার নেই" গ্রামের মানুষদের মুখে প্রায়ই রকম কথা শোনা যায় এবং তাদের মধ্যে মাস্ক ব্যবহারের কোন বালাই দেখা যায় না গ্রামে মাস্ক পরাটাই যেন অনেকের জন্য একটা লজ্জার তবে এটা ঠিক যে, গ্রামে করোনার প্রকোপ অনেকটাই কম তার কারণ, গ্রামে জনসংখ্যার ঘনবসতি কম, এক সাথে বেশি মানুষদের আনাগোনা কম হয় গ্রামে রাজধানী শহর বা বিভাগীয় শহর বা জেলা শহর থেকে প্রতিদিন মানুষদের আসা যাওয়া কম হয়, যেভাবে রাজধানী থেকে বিভিন্ন বিভাগীয় শহর বা জেলা শহরগুলোতে প্রতিদিন মানুষের যাতায়াত হয় অর্থাৎ গ্রামে বাইরে থেকে করোনা আক্রান্ত মানুষদের আনাগোনা কম হয় আবার গ্রামের মানুষ প্রতিদিন শহরে বা রাজধানীতে যাওয়া আসা করে না, যা করোনা বিস্তারের জন্য বড় ভূমিকা পালন করে আর এজন্য গ্রামে করোনার প্রকোপ কম কিন্তু গ্রামে একেবারেই করোনা নেই, তা কি বলা যায়? কারণ সারা দেশের সবাই তো করোনার পরীক্ষা করায়নি গ্রামেও যে কারো করোনা হয়নি বা কখনো হবে না তা তো বলা যায় না হয়ত কারো মধ্যে করোনা আছে কিন্তু লক্ষণ প্রাকাশ পায়নি কিংবা কেউ যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়নি, তাও তো নিশ্চিত করে বলা যায় না কারণ, গ্রামের সব মানুষ তো আর মৃত্যুর কারণ পরীক্ষা করে দেখে না কিংবা আমরা সবাই তো দেশের অন্য গ্রামগুলোর করোনা সংক্রান্ত খবর জানি না তাই গ্রামে করোনা কম থাকলেও একেবারে নেই সে কথা বলা যায় না এবং স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে না তাও ঠিক নয়  

8.     বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ মাঠে-ঘাটে-রোদে খেটে খাওয়া মানুষ, তাই এদেশের মানুষ করোনায় আক্রান্ত হবে না, বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষ" বেশিরভাগ মানুষ এমনটা বলে থাকেন বিজ্ঞানীদের মতে, ভিটামিন ডি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে যা করোনা প্রতিরোধেও সহায়ক আর সূর্যের আলো ভিটামিন এর একটি বড় উৎন। সেই দিক থেকে দেখলে বাংলাদেশের কৃষক, শ্রমিক, কুলি, মজুর, রিক্সা চালক, ভ্যান চালক, মুটে, দিন মজুর, মিস্ত্রি ইত্যাদি খেটে খাওয়া মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রতিনিয়ত রোদে পুড়ে কাজ করে যা তাদের শরীরে ভিটামিন ডি অর্জনে সহায়ক হয়ত সে কারণেও এদেশের বেশিরভাগ খেটে খাওয়া মানুষদের করোনা অতোটা কাবু করতে পারছে না কিন্তু তাই বলে খেটে খাওয়া মানুষদের মধ্যে কেউ- যে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে না বা আক্রান্ত হয়ে পর্যন্ত কেউ- যে মারা যায়নি তা কি আমরা সবাই জানি? কারণ দেশের সব মৃত্যু বা সব অসুখে আক্রান্তের পরিসংখ্যান তো নেই আর দেশের সব মানুষের তো করোনার পরীক্ষা হয়নি তাই কী করে বলা যায় যে, খেটে খাওয়া মানুষদের কেউই করোনায় আক্রান্ত হয়নি বা আক্রান্ত হবে না? আর তাছাড়া আক্রান্ত হলেই যে সবার লক্ষণ প্রকাশ পায় তাও তো নয় যেহেতু খেটে খাওয়া মানুষ রোদে পুড়ে কাজ করে তাই তাদের শরীর ভিটামিন ডি গ্রহণ করার কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকায় করোনায় যদি তারা আক্রান্ত হয়েও থাকে তাহলেও তাদের হয়ত কোন লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে না বা আক্রান্ত হলেও এই ভিটামিন ডি এর প্রভাবে তারা অনেকেই হয়ত এমনিতেই করোনা নেগেটিভ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু তারা করোনার জীবাণু বাহক হতে পারে, এটাতে তো ভুল নেই তারা এই জীবাণু অন্যদের মাঝে ছড়ানোর কাজ করছেন যা করোনা বিস্তারে বিরাট ভুমিকা পালন করছে সুতরাং করোনায় আক্রান্ত হয়ে নিজের ক্ষতি না হলেও বাহক হয়ে অন্যদের মাঝে যাতে না ছড়াতে পারে তার জন্য হলেও খেটে খাওয়া মানুষদেরও স্বাস্থ্যবিধি মানা উচিৎ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার তো নেতিবাচক প্রভাব নেই বরং স্বাস্থ্যবিধি মানলে শুধু করোনাই নয়, অন্যান্য রোগের হাত থেকেও রক্ষা পাওয়া যাবে

9.     "কম-বেশি সবার মধ্যেই করোনার জীবাণু আছে এবং এক সময় সবার শরীরেই এটা প্রবেশ করবে সুতরাং এটা থেকে আলাদা করে বাঁচার চেষ্টা করার দরকার নেই" ধরে নিলাম সবার মধ্যে করোনার জীবাণু আছে কিন্তু সেই থাকা আর এই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার মধ্যে কি কোন পার্থক্য নেই? যেমন সবার শরীরেই ডায়াবেটিকসের মিনিমাম লেভেল থাকে, প্রেসারের মিনিমাম লেভেল থাকে, পানিতে আর্সেনিকের মিনিমাম মাত্রা থাকে ঠিক যদি তেমনটাও ধরে নেই, তাহলেও এই করোনা আসার পূর্বে যে ধরণের করোনা পৃথিবীতে ছিল সেটার সাথে তো এটার বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য আছে পূর্ব থেকে থাকা অন্য বৈশিষ্ট্যের করোনা সবার মধ্যে আছে বলে এখন যে ভয়ংকর বৈশিষ্ট্যের জীবনহানীকর করোনার উদ্ভব হয়েছে সেটাতেও আক্রান্ত হতে হবে এমনটা কি আশা করা উচিত? বর্তমান বৈশিষ্ট্যের করোনা শরীরে প্রবেশ করার ফলে কি সেটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হচ্ছে না? এটা মানুষের মৃত্যুর কারণ হচ্ছে না? আর তাছাড়া যাদের শরীরের ইমিউনিটি পাওয়ার বেশি তাদেরকে হয়ত করোনা অতটা কাবু করছে না, হয়ত কারো কারো করোনার লক্ষণও প্রকাশ পাচ্ছে না কিন্তু সে যে এই রোগের বাহক হয়ে হাজার হাজার লোকের করোনায় আক্রান্তের মৃত্যু কারণ হচ্ছে সেটাতে তো কোন ভুল নেই সেটা এই সকল সাধারণ লোকেরা বুঝতে চাচ্ছে না বা বুঝতে পারছে না আর তাতে করে যাদের বয়স বেশি বা অন্যান্য জটিল রোগে পূর্ব থেকেই ভূগছেন তাদের জন্য এই সকল বাহক ব্যক্তিগণ মারাত্মক ঝুঁকি বয়ে  আনছেন তাছাড়া করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি যদি মারা নাও যায়, যদি সুস্থ্যও হয়ে যায়, তাহলেও করোনা পরবর্তীতে অনেকের শরীরে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি পরবর্তীতে কোভিড নেগেটিভ হলেও অনেকের হৃদযন্ত্র, ফুসফুস, কিডনি, মস্তিষ্ক, বৃক্ক, যকৃত প্রভৃতি অঙ্গ করোনার জটিলতার শিকার হচ্ছে এছাড়া রক্ত জমাট বাঁধা সমস্যা, শারীরিক দূর্বলতা, মানসিক সমস্যা, পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা, চুল পড়াসহ আরো নানাবিধ শারীরিক ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে সুতরাং করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু না হলেও করোনা পরবর্তীতে অনেকের শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে যা পরবর্তীতে মৃত্যু ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে সুতরাং করোনা যাতে না হয় সেই চেষ্টা করাই সব দিক থেকে মঙ্গলজনক আর কারণেই দেশের জনগণকে এখনো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই আর জন্য দরকার ব্যাপক জনসচেতনতা

10. "দেশে করোনায় আক্রান্ত মৃত্যুর হার কমে গেছে সুতরাং আর স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন দরকার নেই" হ্যাঁ হয়ত দেশে বর্তমানে আগের তুলনায় করোনায় আক্রান্ত এবং মৃত্যুর হার অনেক কমে গেছে, এটা সত্য কিন্তু একেবারে নির্মূল তো হয়নি আবার কমে যাওয়ার পরেও আবার একটু করে কখনো কখনো বেড়েও যাচ্ছে কমেছে বলে আবার যে মহামারি আকারে বাড়বে না, সেই গ্যারান্টি তো দেওয়া যায় না যতক্ষণ রোগ একেবারে নির্মূল না হচ্ছে বা করোনার পূর্ণাঙ্গ প্রতিরোধমূলক প্রতিষেধক তৈরি না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদেরকে করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেই হবে কারণ এটা এমন একটা ছোঁয়াচে রোগ যা একজন থেকেই বিশ্বের সব জায়গায় ছড়িয়ে যায়

11.  "করোনার টিকা বা ভ্যাক্সন তৈরি হয়েছে সুতরাং মাস্ক পরা বা স্বাস্থবিধি মানার আর দরকার নেই" হ্যাঁ মহান রাব্বুল আল-আমীনের অশেষ রহমতে বিজ্ঞানীগণের অক্লান্ত পরিশ্রমে খুব দ্রুত করোনার ভ্যক্সিন বা টিকা আবিষ্কার হয়েছে এটার জন্য ভ্যাক্সিন আবিষ্কারক প্রতিষ্ঠানগুলি, বিজ্ঞানীগণ এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তিবর্গ সারা বিশ্ববাসীর নিকট হতে অফুরন্ত ধন্যবাদের দাবীদার কারণ এত অল্প সময়ের মধ্যে এর আগে কোনো টিকা আবিষ্কার হয়নি আর বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমগ্র দেশবাসীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ কৃতজ্ঞতা পাওয়ার যোগ্য কারণ এই টিকা আবিষ্কারের পর অতি অল্প সময়ের মধ্যে তিনি দেশবাসীর জন্য এই টিকা আমদানী করেছেন এবং এখনো পর্যন্ত খুবই সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা সুশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে তা জনগণের মধ্যে প্রদানের ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে তিনি পরবর্তীতে আরো তিন কোটি টিকা আমদানির উদ্যোগ নিয়েছেন যেখানে বিশ্বের অনেক ধনী দেশ এখনো পর্যন্ত টিকা প্রাপ্তির সুযোগই পায়নি, সেখানে এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত সৌভাগ্যের বিষয় যে, অতি তারাতারি আমরা এই টিকা প্রাপ্তির সুযোগ পেয়েছি কিন্তু তাই বলে স্বাস্থ্যবিধি মানা একেবারেই ছেড়ে দিব এটা ভাবা মোটেও ঠিক নয় কিন্তু এটা অনেকেই মোটেও বুঝতে চাচ্ছে না করোনার যে ভ্যাক্সিন বা টিকা আবিষ্কার হয়েছে বা করোনা প্রতিরোধের জন্য যে টিকা নেওয়া হচ্ছে তা কতটা রোগ প্রতিরোধ করতে পারবে বা এটা করোনায় আক্রান্ত রোগীকে মৃত্যু ঝুঁকি থেকে কতটা বাঁচাতে পারবে, কোন বয়সীদের জন্য কতটা প্রতিরোধ করতে পারবে, অন্যানা জটিল রোগে আক্রান্তদের জন্য এই টিকা কতটা প্রতিরোধযোগ্য, পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলভেদে এর আলাদা কোন প্রভাব আছে কিনা - সবই তো পরীক্ষা-নিরীক্ষাসাপেক্ষ সে বিষয়ে এখনো গবেষণা চলছে এই টিকার প্রায়োগিক দিকের ফলাফলের পূর্ণাঙ্গ পরিসংখ্যান পেতে এখনো অনেক সময় লাগবে কারণ পরীক্ষাগুলো তো মানুষের উপরেই করতে হবে তার ফলাফল পেতে সময় তো লাগবেই দেশে বা বিদেশে করোনার টিকা গ্রহণের পরও করোনায় আক্রান্ত বা মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে তবে করোনার টিকা গ্রহণের পর পরই যে এই টিকা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কাজ শুরু করবে তা নয় এটা শরীরে কাজ করতে বেশ কিছুদিন সময় লাগে বিশেষজ্ঞগণের মতে, বাংলাদেশে আমদানিকৃত ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি অক্সফোর্ড-এস্ট্রেজেনিকার টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার ২২ দিন পর শরীরে এন্টিবডি তৈরির কাজ শুরু করে। এছাড়া প্রথম ডোজের পর দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ব্যাপার আছে বিশেষজ্ঞগণ এই টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ নিলে ৫৩% মানুষের শরীরে, সপ্তাহ পর নিলে ৬৪% মানুষের শরীরে, আর মাস পর নিলে ৮৩% মানুষের শরীরে কার্যকারিতার প্রমাণ পেয়েছেন। দুই দফা টিকা নেওয়ার পর কার্যকারিতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায় কিন্তু তা এখনো ১০০ ভাগ মানুষের শরীরে কর্যকারিতার গ্যারাণ্টি দিতে পারছে না। তাই টিকা নেওয়ার আগে বা টিকা নেওয়ার দুই/চার দিন বা অল্প কিছুদিনের মধ্যে যদি কেউ করোনা সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসে এবং স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলে তাহলেও সে করোনায় আক্রান্ত হতে পারে তাই কথা অন্তত বলা যায় যে, এই টিকা গ্রহণ করলেই যে কেউ করোনায় আক্রান্ত হবে না বা আক্রান্ত রোগী মৃত্যুবরণ করবে না তা বলা যায় না এই টিকা করোনায় আক্রান্ত বা মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষার ১০০% নিশ্চয়তা এখনো দিচ্ছে না আবার এই টিকা গ্রহীতা ব্যক্তি যদি পূর্ব থেকেই অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলেও তার টিকা নেওয়ার পরেও ঐ জটিল রোগের কারণে মৃত্যু হতে পারেকিন্তু এটা এই টিকার দূর্বলতা নয়। বিশেষজ্ঞগণ মতে, এগুলোই করোনার টিকা ১০০% কার্যকর না হওয়ায় কারণ। তাছাড়া করোনার টিকায় শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কতদিনের জন্য স্থায়ী হবে সে সম্পর্কে বিশেষজ্ঞগণ এখনই কিছু বলতে পারছেন না। এসব নিয়ে গবেষণা চলছে তাই করোনার সর্বোচ্চ কার্যকরী টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোন বিকল্প নেই অর্থাৎ মাস্ক পরা, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, খুব জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়া, দল বেঁধে ঘুরতে যাওয়া বন্ধ করা, ভীড় জমে রকম অনুষ্ঠান এই মূহুর্তে আর না করা, সাবান বা হ্যাণ্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করা, হাত জীবাণুমুক্ত না করে নাক, মুখ, চোখ, স্পর্শ না করা; হাঁচি, কাশি দেওয়ার সময় রুমাল, টিস্যু বা কনুইয়ের ভাঁজে মুখ ঢাকা, করোনার লক্ষণ দেখা দিলে পরীক্ষা করা, করোনায় আক্রান্ত হলে যথাযথ চিকিৎসা নেওয়া ও আইসোলেশনে থাকা ইত্যাদি

12. "করোনার টিকা নিয়ে কী হবে? এর মধ্যে কী আদৌ ঔষধ আছে, না এটা শুধু পানি? এটা কি ১০০% কার্যকর?" করোনার টিকা গ্রহণের উপকারিতা সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণা নেই। এটা গ্রহণ করলে কী লাভ হবে, এটা শরীরে কতদিনের মধ্যে কীভাবে সক্রিয় হবে ইত্যাদি নিয়ে সাধারণ মানুষদেরকে আগ্রহী করার জন্য সচেতনতামূলক তেমন কোন প্রচার-প্রচারনা নেই।  তাই করোনার যে টিকা সরকার এত গুরুত্বের সাথে বিদেশ থেকে আমদানি করে আনলেন, তার প্রতি একটা মহলের প্রতি খুবই অনীহা এবং তুচ্ছ তাচ্ছিল্য ভাব আসলে ব্যাপারটা হলো, আমরা অতি সহজে, খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই টিকা হাতের নাগালে পেয়ে গেছি এবং সরকার বিনামূল্যে সব শ্রেণি পেশার মানুষের জন্যই এটা উন্মুক্ত করে দিয়েছেন তাই অনেকেই এর গুরুত্ব বুঝতে পারছে না যদি দেশে করোনার টিকা এখনো না আসত বা টিকা গ্রহণের ক্রাইটেরিয়ায় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে অন্তর্ভূক্ত না করা হোত তখন হয়ত মানুষ এর জন্য উন্মুখ হয়ে থাকত। যদিও টিকা গ্রহণের জন্য অনলাইনে রেজিশট্রেশনের পদ্ধতির কারণে নিম্ন শ্রেণি-পেশার মানুষদের টিকা গ্রহণে কিছুটা জটিলতা দেখা যাচ্ছে  সেটা নিয়ে বিকল্প  ভাবনার দরকার কিন্তু করোনার টিকা খুব সহজে আমরা হাতের নাগালে পেয়েছি বলে তার প্রতি গুরুত্ব দিব না, টিকা গ্রহণ করব না, তা তো ঠিক নয় কারণ এই টিকা গ্রহণ করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে, করোনায় আক্রান্তের হার কমবে, টিকা গ্রহণকারী পরবর্তীতে করোনায় আক্রান্ত হলেও তার সারভাইভ ক্যাপাসিটি অনেকটাই বেশি থাকবে  

13. "টিকা গ্রহণের পরেও মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে সুতরাং এই টিকা গ্রহণ করে লাভ কী?" মিডিয়ার খবরগুলোতে টিকা গ্রহণের পরেও কারো কারো আক্রান্ত বা মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে আর এতেই কারো কারো  মধ্যে ধারণা তৈরি হচ্ছে যে, করোনার টিকা নেওয়ার পরও মানুষ আক্রান্ত হয় বা মৃত্যুবরণ করে সুতরাং করোনার টিকা নিয়ে লাভ নেই এভাবে অনেকের মধ্যে করোনার প্রতি অনাস্থা তৈরি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু করোনার টিকা গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই শরীরে রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা সক্রিয় হয় না তার জন্য কয়েকদিন সময় লাগে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের  তথ্য মতে, "করোনা ভাইরাসের দুইটি ডোজ শেষ হওয়ার পরেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হতে দুই সপ্তাহ সময় লাগে" এছাড়া পূর্বেই বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে আমদানিকৃত ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি অক্সফোর্ড-এস্ট্রেজেনিকার টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার ২২ দিন পর শরীরে এন্টিবডি তৈরির কাজ শুরু করে। তাই টিকা গ্রহণের পূর্বেই যদি কেউ সংক্রমিত হয়ে থাকেন বা টিকা গ্রহণের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই যদি করোনা রোগীর সংস্পর্শে আসেন বা যদি অন্যান্য জটিল রোগের রোগী হয়ে থাকেন অথবা যদি তিনি বেশি বয়স্ক হয়ে থাকেন সে ক্ষেত্রে করোনার টিকা গ্রহণের পরেও ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটতে পারে অর্থাৎ টিকা কার্যকর হওয়ার আগেই তিনি করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন বা মৃত্যুবরণ করতে পারেন বিশেষজ্ঞদের মতে, টিকা সম্পূর্ণ নির্ভরযোগ্য ব্যতিক্রম কিছু ঘটনা ঘটলে সেটা টিকার জন্য নয় টিকা গ্রহণের দু/চার দিন আগে-পরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে থাকলে বা অন্য জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকলে বা বেশি বয়স্ক ব্যক্তিদের কারো কারো ক্ষেত্রে রকম ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের মত  

সচেতনতা বৃদ্ধি ও করোনার বিস্তার রোধে কিছু সুপারিশঃ

1.      পেশাভিত্তিকভাবে করোনায় মৃতের পরিসংখ্যান তুলে ধরলে সাধারণ জনসাধারণের ভুল ধারণা হয়ত দূর হোত তাহলে "করোনায় শুধু বড়লোকেরাই মারা যায়" এই ভুল ধারণা থেকে সরে এসে মানুষ করোনার ব্যাপারে সতর্ক সচেতন হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রতি আগ্রহী হোত   

2.     করোনার বিষয়ে ব্যানার, পোস্টার তৈরি করে জনসম্মূখে দর্শনীয় স্থানে ঝুলিয়ে রাখা এবং করোনা সচেতনতামুলক ফেস্টুন, লিফলেট ইত্যাদি লিখে জনগণের মধ্যে বিতরণ করা

3.     মসজিদ, মন্দির, গীর্জা ইত্যাদি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় আলোচনার পাশাপাশি করোনার সতর্কতা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করার বিষয়ে আলোচনা করা

4.      প্রতিটি সরকারি, বেসরকারি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি সংস্থা, সংগঠন এনজিওসহ সকল ধরণের প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদেকে স্বাস্থবিধি মানা মাস্ক ব্যবহারের বিষয় নিশ্চিত করা এবং বিষয়ে কঠোর নজরদারি করা সেই সাথে প্রতিটা প্রতিষ্ঠানের স্টেকহোল্ডারদেরকেও মাস্ক ব্যবহারসহ শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং হাত জীবাণুমুক্ত ও প্রতিষ্ঠান জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা করা

5.     প্রতিটি গণপরিবহণের মালিকগণ তাদের গণপরিবহণের ড্রাইভার, হেল্পার, কন্ড্রাকটরসহ সকল যাত্রীদেরকে মাস্ক ব্যবহারসহ হ্যাণ্ড স্যানিটাইজারের বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া ব্যবস্থা করা কেউ মাস্ক ছাড়া গাড়িতে উঠলে তাকে মাস্ক সরবরাহ করা প্রয়োজনে বাস ভাড়ার সাথে মাস্কের দাম রাখা বিষয়ে সড়ক পরিবহণ মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিলে এবং মনিটরিং করলে ভাল হয়

6.     প্রতিটি মন্ত্রণালয় নিজ নিজ অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, বিভাগীয় কার্যালয়, জেলা উপজেলা কার্যালয়ের স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি মনিটরিং করা    

7.      স্থানীয় সরকার, স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নিজ নিজ এলাকায় জনগণের মাস্ক ব্যবহার বিষয়ে কঠোর নজরদারী করা সচেতনতা বিষয়ক প্রচারণা ও কার্যক্রম চালানো

8.     আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক জনগণকে মাস্ক ব্যবহারেরর বিষয়ে আগের মতোই গুরুত্ব দিয়ে তদারকি করা এবং সরকার প্রবর্তিত আইন প্রয়োগে কঠোর হওয়া

9.     স্থানীয় সরকার, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রাশাসন, ইউনিয়ন পরিষদ ইত্যাদি সংস্থার পক্ষ থেকে করোনা প্রতিরোধে মাস্ক ব্যবহার স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে মাইকিং করা

10.  স্থানীয় সরকার, সিটি কর্পোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ এর পক্ষ থেকে জনগণকে মাস্ক-এর সঠিক ব্যবহার এবং মানসম্মত মাস্ক ব্যবহার সম্পর্কে মাইকিং করা, পোস্টার, ফেস্টুন, লিফলেট তৈরি বিতরণ  করা,

11.  বাজারে মানসম্মত মাস্ক বিক্রি হচ্ছে কিনা তা স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মনিটরিং করা

12. রাস্তা-ঘাটে যেখানে সেখানে ব্যবহৃত মাস্ক না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা এবং ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করা

13. রাস্তায় কফ, থুথু না ফেলার ব্যাপারে সচেতন করা  

14.  সার্জিক্যাল মাস্ক একটাই প্রতিদিন ব্যবহার না করে প্রয়োজনে কাপড়ের মাস্ক ব্যবহারের প্রতি প্রচারণা চালানো যা ধুয়ে পরবর্তীতে ব্যবহার করা যায়

15. "নো মাস্ক নো সার্ভিস" - সরকারের এই নির্দেশনা দেশের সকল সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এনজিও, কোম্পানি, দোকান, শপিং মল, গণপরিবহণসহ সকল ক্ষেত্রের সকল কর্তৃপক্ষ নিজেও অনুসরণ করবেন, অধীনস্ত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকেও কঠোরভাবে অনুসরণ করতে বাধ্য করবেন

16. শারীরিক দূরত্বের পরিমাপ বলার সময় ফুট বা মিটার বলার পাশাপাশি দুই হাত বা গজ দূরত্ব - এই কথাটা বললে সাধারণ জনগণের শারীরিক দূরত্বের পরিমাণটা বুঝতে সুবিধা হবে

17.  সরকারি কর্মকাণ্ডসহ সকল সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক দল, সংস্থা ও সংগঠনের মিছিল, মিটিং, আলোচনা সভা, প্রতিবাদ সভা ইত্যাদি কার্যক্রমে সরকার নির্দেশিত মাস্ক ব্যবহারসহ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং বর্তমানে এই কাজগুলো সীমিত পর্যায়ে করা

18. টেলিভিশনের বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠান, টক শো বা অন্য কোন অনুষ্ঠানে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ মাস্ক ব্যবহারের চর্চাটা অব্যাহত রাখা যাতে দর্শকগণ সেটা দেখে মাস্ক পরার প্রতি অনুপ্রাণিত হয় এছাড়া টেলিভিশনের বিভিন্ন নাটকে কিছু কিছু চরিত্রে করোনার শুরুতে যেমন ঘরের বাইরের দৃশ্যগুলিতে মুখে মাস্ক পরা অভিনয় দেখানো হোত, এখনো তেমন কিছু কিছু দৃশ্য দেখানো অব্যাহত রাখা যাতে সাধারণ দর্শকগণ মাস্ক ব্যবহারের প্রতি আগ্রহটা ফিরে পায় এবং সচেতন হয় কারণ দেশের যে কোন ক্রান্তিকালে মিডিয়ায় প্রচারিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সামাজিক সচতনতামূলক কার্যক্রম প্রচার করে দেশের মানূষকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করা মিডিয়াগুলির নৈতিক দায়িত্ব যদিও দেশের সকল টিভি চ্যানেল, বেতার, প্রিন্ট মিডিয়া সকল মিডিয়াই করোনার বিস্তার রোধে বিভিন্ন রকম অনুষ্ঠান প্রচার করে যাচ্ছে কিন্তু বেশির ভাগ সাধারণ মানুষ টিভিতে নাটক বা সিনেমাই বেশি দেখে থাকে তাই নাটকের চরিত্রগুলোতে মাস্ক ব্যবহারের দৃশ্য দেখানো অব্যাহত রাখলে তা সাধারণ জনমনে সচেতনতা জাগাতে ভূমিকা রাখতে পারে তা না হলে দেশের জনগণ তো ধরেই নিয়েছে যে, দেশে করোনা আর নেই আর এটা ধরে নিয়েই স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রতি তাদের চরম অনীহা, অবহেলা আর গাফিলতি দেখা যাচ্ছে করোনা কমে গেছে বলে আর স্বাস্থ্যবিধি মানব না বা এটাকে গুরত্ব দিব না তা করলে চলবে না দেশে যখন প্রথম করোনা আরোগী ধরা পড়ল তখন যেমন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছিল এখনো তাই- নিতে হবে করোনা কমে গেছে ঠিকই, কিন্তু একেবারে নির্মূল তো হয়নি এখনো প্রতিদিন শত শত মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে এবং মৃত্যুর সংখ্যা ১ ডিজিট থেকে উঠে আবার দুই ডিজিটে চলে গেছে ঠিক দেশে প্রথম দিকে করোনায় আক্রান্ত আর মৃত্যুর যে চিত্র দেখা যেত, সেই রকম সংখ্যা দেশে বর্তমানে দেখা যাচ্ছে যদিও আল্লাহ্ অশেষ মেহেরবানীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দেশে অতি দ্রুত করোনার ভ্যাক্সিন চলে এসেছে তবে জনসংখ্যার তুলনায় এই ভ্যাক্সিন এখনো অপ্রতুল তাই যতদিন পুরো দেশের জনগণকে ভ্যাক্সিনের আওতায় আনা সম্ভব না হচ্ছে ততদিন দেশের প্রতিটি জনগণকে মাস্ক পরা, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ সকল প্রকার স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে  

19.  স্থানীয় সরকারের পক্ষ থেকে করোনার ভ্যাক্সিন বা টিকা নেওয়ার ব্যাপারে ব্যাপকভাবে প্রচার-প্রচারণা চালানো এর সুফল সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার জন্য মাইকিং করা, পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন, লিফলেট ইত্যাদি তৈরি বিতরণের ব্যবস্থা করা

20. বেতার, টিভি সংবাদ মাধ্যমে টিকা গ্রহণের ব্যাপারে জনসচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণার ব্যবস্থা করা কারণ করোনার টিকা গ্রহণকারী ব্যক্তি পরবর্তীতে করোনায় আক্রান্ত হলেও এবং তিনি অন্যান্য জটিল রোগে ভূগলেও তাকে হাসপাতালে নেওয়া বা চিকিৎসা দেওয়া পর্যন্ত এই টিকা গ্রহণের প্রভাব হয়ত তাকে অনেকখানি রক্ষা করতে পারবে

21. মিডিয়াগুলোতে করোনা বিষয়ক সঠিক তথ্য তুলে ধরা এবং বিভ্রান্তিমূলক ও দ্ব্যর্থবোধক তথ্য পরিবেশন না করা। 

22. জনগণকে বিভিন্ন পারিবারিক, সামাজিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও সাংগঠনিক অন্যান্য সকল কর্মকাণ্ডে গণজমায়েত সীমিত করার জন্য কঠোর নির্দেশনা দেওয়া এবং ব্যাপারে কঠোর মনিটরিং করা বিশেষ করে মিছিল, মিটিং, মানববন্ধন, প্রতিবাদ সভা, পিকনিক, পর্যটন কেন্দ্রেগুলিতে হাজার হাজার মানুষের গাদাগাদি করে বেড়ানো ইত্যাদি বিষয়ে জনগণকে পুণরায় নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা।    

23.                        পূর্বের মতোই বিভিন্ন অফিস, প্রতিষ্ঠান, দোকান, শপিং মল ইত্যাদি স্থানে হ্যাণ্ড স্যানিটাইরের ব্যবস্থা রাখা

24. রাস্তার মোড়ে মোড়ে, বাজারের জনবহুল স্থানে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পূর্বের মতোই সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা এতে করে জনগণ যেমন ঘরের বাইরে গিয়েও হাত ধোয়ার সুযোগ পাবে, তেমনি তাদের মধ্যে এখনো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার দৃষ্টিভঙ্গি চলমান থাকবে

25. জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মানানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে পুণরায় কঠোর ব্যবস্থ্যা গ্রহণ করা

26.                        ব্যক্তিগত পর্যায় থেকেও প্রতিটা ব্যক্তির যতটা সম্ভব সচেতনতার কাজ সাধ্যমত চালিয়ে যাওয়া

27. স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাস্কবিহীন ব্যক্তিদেরকে মাস্ক সরবরাহ করে মাস্ক ব্যবহারের প্রতি উৎসাহিত করা।

28.শিক্ষক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের প্রথম দ্বিতীয় ডোজ করোনা টিকা প্রদানের পূর্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না খোলা

29. দেশে করোনা সংক্রমণের প্রথম দিকে যতটা গুরুত্বের সাথে করোনার সতর্কতামূলক সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হয়েছে, এখনো ঠিক ততটাই গুরুত্বের সাথে এই কার্যক্রম অব্যহত রাখা

30. বিদেশ থেকে আগতদেরকে পূর্বের মতো বিমানবন্দরেই করোনা পরীক্ষা অব্যাহত রাখা এবং বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা তা না হলে সম্প্রতি বিদেশে শনাক্তকৃত নতুন স্ট্রেইনের করোনা আমাদের দেশে ব্যাপকভাবে সংক্রমিত হলে আমরা যে টিকা গ্রহণ করছি, তা ঐ করোনার বিরুদ্ধে কার্যকর নাও হতে পারে। তাহলে এটা সব দিক থেকে ক্ষতিকর হবে

31. দেশের প্রত্যেকটা নাগরিককে করোনা পরীক্ষার আওতায় নিয়ে আসা এবং বিনামূল্যে বাধ্যতামূলক পরীক্ষার ব্যবস্থা করা

32.                        করোনার টিকা গ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি সহজ করা

33.                       দেশের প্রত্যেকটা নাগরিককে টিকা গ্রহণের আওতায় নিয়ে আসা

34. টিকা গ্রহণের পর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হতে সময় লাগে - এই মর্মে জনসচেতনতা তৈরি করা যাতে টিকা গ্রহণের পরেও সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে এবং টিকা গ্রহণের পরে কেউ আক্রান্ত বা মৃত্যু হলে টিকার প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি না হয় 

35.                        টিকা গ্রহণের পরেও স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রতি সচেতনতা তৈরির জন্য প্রচারণা চালানো। টিকা গ্রহণ কেন্দ্রে টিকা প্রদানের সময় এ বিষয়ে তথ্য দেওয়া যেতে পারে বা লিফলেট প্রদান করা যেতে পারে

36.                        সম্প্রতি করোনার নতুন স্ট্রেইন সম্পর্কে প্রচারণার মাধ্যমে জনগণকে সতর্ক করা যাতে তারা স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রতি আগ্রহী হয়।

37.অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ার আগেই প্রয়োজনে পুনরায় কিছুদিনের জন্য লকডাউন দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা।

1.       

2.   সর্বোপরি, করোনা প্রতিরোধে এবং করোনাকালীন দেশের আর্থ-সামাজিক কার্যক্রম, শিক্ষা, চিকিৎসা, শিল্প, বাণিজ্যসহ সকল ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সকল নির্দেশনা প্রতিটি সেক্টরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ দেশের সকল নাগরিকের অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই এই মহামারীর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে ইনশাল্লাহ্ একই সাথে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সকল নাগরিকেরও পুরোপুরি করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা দরকার তবেই আমরা পেতে পারি করোনামুক্ত বিশ্ব             


Comments